পলিথিনে ঢাকার বাজার সয়লাব, কাজে আসেনি নিষেধাজ্ঞা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:০৬, ২০ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০৬, ২০ জুন ২০২৫

ঢাকার কারওয়ান বাজার, মিরপুর, মহাখালীসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছয় মাস আগের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার চলছে। বাজারের প্রতিটি দোকান ও খুচরা বিক্রেতার ঝুলন্ত থলিতে সহজেই চোখে পড়ছে কালো কিংবা নীল রঙের পলিথিন। নিষিদ্ধ পণ্য হওয়া সত্ত্বেও এর বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ হয়নি, কারণ পলিথিনের কার্যকর বিকল্পের এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
ক্রেতা ও বিক্রেতা—উভয়পক্ষই বলছেন, কেবল অভিযান চালিয়ে বা নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে পলিথিন বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন যথাযথ বিকল্পের প্রাপ্যতা এবং পলিথিন উৎপাদন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা।
বাজারে বিকল্প ব্যাগ সরবরাহে ঘাটতির জন্য উদ্যোক্তারা সরকারি উদ্যোগের অভাব ও উৎপাদনকারীর সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে বিকল্প ব্যাগ তৈরি শুরু করে আর্থ ম্যাটার্স লিমিটেড। ভুট্টা ও হাড়ের গুঁড়ো থেকে তৈরি পরিবেশবান্ধব এই ব্যাগ এখন মাসে ১০ লাখ ইউনিট উৎপাদন করছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম জানান, “পলিথিনের যে পরিমাণ ব্যবহার, আমাদের তৈরি বিকল্প তার ১ শতাংশও না। মূলত করপোরেট পর্যায়ে অর্ডার এলেও, বাজার পর্যায়ে যেতে পারছি না। সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি একটি গাইডলাইন দেয় এবং রেগুলেটরি বডি তৈরি করে, তাহলে অনেকেই এই খাতে আসবে। মানুষ জানে না, সচেতনতা গড়ে উঠলেও উৎপাদন অপ্রতুল। আমাদের ব্যাগ পচনশীল হওয়ায় বেশি দিন সংরক্ষণও করা যায় না।”
রাজশাহীর ক্রিস্টাল বায়োটেক নামক প্রতিষ্ঠান ভুট্টা দিয়ে তিন বছর ধরে বিকল্প ব্যাগ তৈরি করছে। তবে দিনে দুই লাখ ব্যাগ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও, তারা এখনো সীমিত উৎপাদনে রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী ইফতেখারুল হক বলেন, “পলিথিন সহজলভ্য, আর মানুষ এখনো সেটাতেই অভ্যস্ত। সরকার টিস্যু ব্যাগ নিষিদ্ধ করেনি, আর আমাদের ব্যাগটা পচনশীল হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারি না।”
তিনি বলেন, “সুপারশপ অর্ডার দিতে চেয়েছিল, কিন্তু সরকার তাদের বলেছে কাগজ, পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করতে। অথচ আমাদের ব্যাগও পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই। এর প্রচার ও নীতিগত সহায়তা জরুরি।”
এদিকে, পরিবেশ অধিদপ্তর গত ১৯ জানুয়ারি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ অনুমোদনের জন্য কোম্পানিগুলোকে নমুনা ও তথ্য জমা দিতে আহ্বান জানায়।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান দেশের শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টালকে বলেন, “আবেদনগুলো পর্যালোচনায় রয়েছে। আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
তবে বাস্তবতা হলো—যতদিন না পলিথিন কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে এবং বাজারে পর্যাপ্ত বিকল্প পৌঁছাচ্ছে, ততদিন শুধু নিষেধাজ্ঞা আর অভিযান দিয়ে এই প্লাস্টিক দূষণ ঠেকানো যাবে না—এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা।