উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক কচ্ছপের সংকট: পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৫৪, ১ জুলাই ২০২৫

উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক কচ্ছপের সংকট: পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত

বাংলাদেশের সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সামুদ্রিক কচ্ছপ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা ও তথ্য অনুযায়ী, এই বিপন্ন প্রজাতির কচ্ছপ এখন ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়ার মতো এলাকাগুলিতে কচ্ছপের বাসা বাঁধার হার গত চার দশকে প্রায় ৮০ শতাংশ কমেছে। এই হ্রাস সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, যার ফলে জেলিফিশের আধিক্যসহ মাছের উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ২০০-রও বেশি ডিম বহনকারী অলিভ রিডলে কচ্ছপ মৃত অবস্থায় উপকূলে পাওয়া গেছে। ইউএসএআইডি-এর ইকোফিশ-II প্রকল্পের গবেষণায় ২০২০ সালে দেখা যায়, কক্সবাজার উপকূলে মৃত কচ্ছপগুলোর ৭০ শতাংশের বেশি পাখনা কাটা ছিল বা গুরুতরভাবে ক্ষতবিক্ষত ছিল। এগুলোর অনেকগুলোর মৃত্যুর কারণ ছিল জেলেদের জালে আটকে গিয়ে পাখনা বা গলা কেটে দেওয়া, বা দীর্ঘসময় জালে আটকে থাকার কারণে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু।

অন্যদিকে গভীর সমুদ্রে লং-লাইন ফিশিংয়ের সময় কচ্ছপ হুকের সাথে আটকে পড়লেও হুক না খুলে শুধু রশি কেটে দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, যার ফলে তাদের শরীরে স্থায়ী ক্ষত তৈরি হয় এবং তারা ধীরে ধীরে মারা যায়।

এই পরিস্থিতির বিপরীতে কিছু ইতিবাচক উদাহরণও তৈরি হয়েছে। ইকোফিশ-II প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় জেলেদের কচ্ছপ সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১০টি ল্যান্ডিং সেন্টার ভিত্তিক কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি, ৪২৯টি ফিশারিজ কনজারভেশন গ্রুপ, এবং হাজারের বেশি মাছ ধরার নৌকার মালিক ও স্কিপারদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। তারা এখন কচ্ছপ জালে আটকে গেলে উদ্ধার করে নিরাপদে সমুদ্রে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে এই উদ্যোগের মাধ্যমে শত শত কচ্ছপকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

২০২৪ সালে কুতুবদিয়ায় একটি ইন-সিটু হ্যাচারি স্থাপন করা হয় যেখানে ১৪৯টি কচ্ছপের ছানা সফলভাবে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে। এই ধরণের উদ্যোগ শুধু কচ্ছপ সংরক্ষণেই নয়, বরং স্থানীয় জেলেদের সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণে উৎসাহিত করছে।

ওয়ার্ল্ড ফিশের মতে, এই সংকট মোকাবেলায় বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন, এবং স্থানীয় জনগণের সক্রিয় সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা জরুরি। নইলে সামুদ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য আরও হুমকির মুখে পড়বে, যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ উপকূলের সামুদ্রিক সম্পদ ও অর্থনীতিতেও।

আরও পড়ুন