গমের ব্লাস্ট রোগ: বিবরণ, বিস্তার ও প্রতিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২, ২ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ০৮:০৩, ২ জুলাই ২০২৫

গমের ব্লাস্ট একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ, যা গম চাষে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। প্রথমবার এ রোগ ধরা পড়ে ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলে এবং পরে এটি দ্রুত দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রথম শনাক্ত হয় ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই মৌসুমে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এই রোগের আক্রমণ হয় এবং ফলন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। বাংলাদেশের গম চাষে এর প্রাদুর্ভাব সাম্প্রতিক হলেও ক্ষতির মাত্রা এতটাই বেশি যে এটি এখন গম উৎপাদনের প্রধান রোগগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত।
এই রোগ Magnaporthe oryzae নামক ছত্রাকের triticum নামক বিশেষ উপপ্রজাতি দ্বারা হয়ে থাকে। ছত্রাকটি প্রধানত গম গাছের শীষে আক্রমণ করে। আক্রান্ত শীষের অংশে কালো দাগ দেখা যায় এবং দাগের উপরের অংশ সাদা হয়ে যায়। কখনো কখনো গোড়ার দিকেই আক্রমণ হলে পুরো শীষটাই সাদা হয়ে যায়। এতে দানাগুলো অপুষ্ট হয়ে কুঁচকে যায় ও ধূসর বর্ণ ধারণ করে। শীষ ছাড়াও পাতায়ও এই রোগের আক্রমণ হতে পারে, সেখানে চোখের মতো ধূসর দাগ দেখা যায়।
রোগটি প্রধানত আক্রান্ত বীজ, বাতাস এবং কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ছড়ায়। প্রথমে জমির কিছু স্থানে সাদা শীষ দেখা যায় এবং অনুকূল পরিবেশে তা দ্রুত আশপাশের গাছে ছড়িয়ে পড়ে। রোগ শনাক্ত করা সহজ, কারণ গাছের সবুজ অংশের তুলনায় সাদা শীষ সুস্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। বৃষ্টির কারণে যদি গাছের শীষ ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা ভেজা থাকে এবং তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয়, তাহলে রোগটির প্রকোপ বেড়ে যায়। রোগ লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পুরো জমির ফসল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এই রোগ প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। ব্লাস্টমুক্ত জমি থেকে সংগ্রহ করা বীজ ব্যবহার করতে হবে এবং বীজ বপনের আগে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। মাঠে থাকা ঘাসজাত আগাছা—যেমন চাপড়া, শ্যামা, আঙ্গুলি ঘাস—এই রোগের জীবাণুর আবাসস্থল হতে পারে, তাই ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। ক্ষেত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা গেলে প্রতিকারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সতর্কতা ও নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সঠিক সময়ে প্রতিকার না নিলে এই রোগ পুরো মৌসুমের গম উৎপাদনকে বিপর্যস্ত করতে পারে।