গবাদিপশুর ক্ষুরা রোগ: লক্ষণ, বিস্তার, চিকিৎসা ও প্রতিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭:৩৮, ২ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ০৭:৩৯, ২ জুলাই ২০২৫

গবাদিপশুর ক্ষুরা রোগ: লক্ষণ, বিস্তার, চিকিৎসা ও প্রতিকার

গবাদিপশুর জন্য মারাত্মক ছোঁয়াচে ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে অন্যতম হলো ক্ষুরা রোগ। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ও হাতিসহ বিভক্ত ক্ষুরবিশিষ্ট প্রাণীরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে ছয় মাস বয়সের নিচের পশুদের জন্য এটি প্রায় মড়ক আকারে দেখা দেয়। বাংলাদেশের সব ঋতুতে এই রোগ দেখা গেলেও বর্ষা শেষে এর প্রকোপ বেশি হয়।

ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত পশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। মুখগহ্বর, দাঁতের মাড়ি, জিহ্বা ও পায়ের ক্ষুরের মাঝে ঘা হয়। এসব ঘা থেকে ফেনাযুক্ত লালা বের হয় এবং ওলানেও ফোসকা পড়তে পারে। পশু খোঁড়াতে থাকে, খেতে কষ্ট হয় এবং দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। গর্ভবতী গাভি গর্ভপাত করতে পারে এবং দুধ উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়। যদিও প্রাপ্তবয়স্ক গরুতে মৃত্যুহার কম, কিন্তু ৬ মাস বয়সের নিচের বাছুরদের মধ্যে ৯৫% মারা যায়।

এই ভাইরাস আক্রান্ত পশুর লালা, মল-মূত্র, দুধ এবং ঘায়ের রসের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। তা বাতাস ও খাদ্যের মাধ্যমে অন্য পশুতে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত পশুর ব্যবহৃত দ্রব্য বা পশুজাত পণ্য থেকেও এ রোগ ছড়ায়। এমনকি বাতাসের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

চিকিৎসায় আক্রান্ত পশুকে দ্রুত আলাদা করতে হবে। মুখের ঘা ফিটকিরির পানি দিয়ে (১০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে) পরিষ্কার করতে হবে এবং সোহাগা ও খৈর গুড়া করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রলেপ দিতে হবে। ক্ষত পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানো পানি (০.০১%) দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। পায়ের ঘা খাওয়ার সোডা মেশানো পানি দিয়ে পরিষ্কার করে সালফানিলামাইড পাউডার ব্যবহার করা ভালো। মাছি দূরে রাখতে সালফানিলামাইড ও নিগুভন পাউডার নারিকেল তেল বা ভ্যাসলিনের সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দিয়ে ঘা ধুয়ে নিতে হবে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে পেনিসিলিন বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন দিতে হবে। মুখে ঘা থাকলে এবং পশু না খেলে স্যালাইন (৫% গ্লুকোজ + ০.৯% সেডিয়াম ক্লোরাইড) শিরায় দিতে হবে। সেই সঙ্গে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ইনজেকশন প্রয়োগে উপকার মেলে।

রোগ বিস্তার ঠেকাতে মৃত পশুকে ৪-৫ ফুট গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে। অসুস্থ গাভির দুধ ৬ মাসের কম বয়সী বাছুরকে খাওয়ানো যাবে না। বাছুরকে আলাদা রাখতে হবে।

ক্ষুরা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা। গবাদিপশুকে বছরে দু’বার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। এ টিকা উপজেলা ও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে পাওয়া যায়। সময়মতো টিকা দিলে এ রোগ প্রতিহত করা সম্ভব।

আরও পড়ুন