দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনে সুফল পাবে মৎস্য খাত

প্রকাশ: ১২:০৭, ১ জুলাই ২০২৫

দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনে সুফল পাবে মৎস্য খাত

দেশীয় শিং মাছের প্রজাতিকে সংরক্ষণ পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো এর পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ বায়োলজি জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক . তাসলিমা খানম তাঁর গবেষক দল। একইসঙ্গে, তাঁরা শিং মাছের লিঙ্গ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিনও শনাক্ত করার দাবি করেছেন।

গবেষণা দলের সদস্য ছিলেন একই বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ, স্বর্ণা, হালিমা, জেসমিন, কানিজ সারা। গবেষণাটি ২০২০ সালে বাকৃবির নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হলেও পরে জাপান সোসাইটি ফর দি প্রমোশন অব সায়েন্স (JSPS)-এর আর্থিক সহায়তায় ২০২২-২০২৪ মেয়াদে সম্পন্ন হয়।

জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশীয় শিং মাছের ৮টি পরিবারভুক্ত প্রায় ৮০০ পোনার নমুনা নিয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে জিনোম সিকোয়েন্সিং বায়োইনফরমেটিকস বিশ্লেষণের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা হয়।

প্রধান গবেষক অধ্যাপক . তাসলিমা খানম জানান, “এই গবেষণার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দেশীয় মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচিত হয়েছে এবং এতে পুরুষ স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে শুধু স্ত্রী মাছ উৎপাদন করে অধিক বাণিজ্যিক চাষ করা সম্ভব হবে।

উল্লেখ্য, স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ মাছের তুলনায় ৪০৬০% বেশি। তাই মনোসেক্স (শুধুমাত্র স্ত্রী) মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে শিং মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন অনেক গুণ বাড়ানো সম্ভব। প্রচলিত হরমোন-নির্ভর পদ্ধতির বদলে এই গবেষণায় মার্কার অ্যাসিসটেড সিলেকশন (MAS) পদ্ধতি ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে, যা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশবান্ধব।

শিং মাছ পুষ্টি ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ২২০ মিলিগ্রাম লৌহ উপাদান থাকে, যা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কম কাঁটা, সুস্বাদু স্বল্প চর্বিযুক্ত হওয়ায় এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় মাছ। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস অতিরিক্ত আহরণের কারণে এই প্রজাতি হুমকির মুখে।

. তাসলিমা খানম আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা পর্যাপ্ত গবেষণা সহায়তা পেলে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনে তিনি সফল হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান, এই গবেষণার পাশাপাশি ২০২২ সালে বাকৃবিতে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত শিং তিলাপিয়া মাছ থেকে দুটি নতুন প্রজাতির প্রোবায়োটিক উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলো আধুনিক প্রচলিত চাষ পদ্ধতিতে ইতিবাচক ফলাফল দিয়েছে। এসব প্রযুক্তিকে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।

আরও পড়ুন