কাপ্তাই লেকে কার্পজাতীয় মাছের পঞ্চম প্রজননক্ষেত্রের সন্ধান
রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২:৫৪, ৩০ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৫, ৩০ জুন ২০২৫

কাপ্তাই লেকে কার্পজাতীয় মাছের নতুন একটি প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা। লংগদু উপজেলার কাসালং চ্যানেলের মালাদ্বীপ মসজিদ সংলগ্ন এলাকাটি সম্প্রতি চিহ্নিত হয়েছে এ খাতের পঞ্চম প্রজননক্ষেত্র হিসেবে। এর ফলে কাপ্তাই লেকে কার্পজাতীয় মাছের প্রজননের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো।
বিএফআরআই-এর গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার ও বি. এম. শাহিনুর রহমান। দলে আরও ছিলেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. খালেদ রহমান ও মো. লিপন মিয়া।
এর আগে চিহ্নিত চারটি প্রজননক্ষেত্র হলো—
১. কাসালং চ্যানেলের মাইনীমুখ মাস্তানের টিলা সংলগ্ন এলাকা
২. কর্ণফুলী চ্যানেলের জগন্নাথছড়ি এলাকা
৩. চেংগী চ্যানেলের নানিয়ারচর এলাকা
৪. রীংকন চ্যানেলের বিলাইছড়ি এলাকা
বিএফআরআই-এর রাঙামাটিস্থ নদী উপকেন্দ্র কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই লেকে মাছের উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিপক্বতা, প্রাকৃতিক প্রজনন ও রেণু সংগ্রহ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পূর্বের প্রজননস্থল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার উজানে মালাদ্বীপ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ডিম সংগ্রহ করে নতুন প্রজননক্ষেত্র শনাক্ত করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, সংগ্রহকৃত ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের হার ছিল ৯০-৯৫ শতাংশ। প্রজনন মৌসুমে (মে-জুলাই) কাসালং চ্যানেলের পানির গভীরতা ছিল ১.৮ থেকে ২.৪ মিটার। পানির তাপমাত্রা ছিল ২৬.৬২ থেকে ২৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫.২-৬.৬ মিগ্রা./লি., পিএইচ মান ৭.২৮-৭.৪০ এবং লবণাক্ততা ০.০১-০.০২ পিপিএম—সব কিছুই মাছের প্রজননের জন্য অনুকূল ছিল।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাপ্তাই লেকে মাছের উৎপাদন ছিল ১৭ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন, যা প্রায় ২৬ হাজার ৬৮৮ জন মৎস্যজীবী ও তাদের পরিবারের জীবিকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের সময় পরিবর্তিত হওয়ায় এবং পলিমাটির কারণে প্রজননক্ষেত্রগুলোর পানির গভীরতা কমে যাচ্ছে। এতে মাছের প্রজনন বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। একই সঙ্গে কার্পজাতীয় মা মাছের অভিপ্রয়াণ পথ সংকীর্ণ হওয়ায় প্রজননক্ষেত্রের পরিধিও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।