পটুয়াখালীর মুগডাল রপ্তানি হচ্ছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪:২০, ৩০ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৪:২৫, ৩০ জুন ২০২৫

পটুয়াখালীর মুগডাল রপ্তানি হচ্ছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়ায়

পটুয়াখালীতে উৎপাদিত মুগডাল এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত ডাল। জমির উর্বরতা, ভালো ফলন এবং বাজারে উচ্চমূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা এখন ব্যাপকভাবে মুগডালের চাষ করছেন। চলতি রবি মৌসুমে জেলার অধিকাংশ জমিতেই আবাদ হয়েছে মুগডাল।

পটুয়াখালী কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৮৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৯১ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ছিল ১ হাজার কেজি, তবে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫০ কেজিতে। পুরো জেলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৯৮২ কোটি টাকা।

জেলার সদর উপজেলা ছাড়াও দশমিনা, গলাচিপা, বাউফলসহ বিভিন্ন উপজেলায় মুগডালের আবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কৃষকরা জানাচ্ছেন, অল্প খরচে এবং স্বল্প সময়ে এ ফসল ঘরে তোলা যায় বলে এর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। একজন কৃষক দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে খরচ কমিয়ে হেক্টরপ্রতি প্রায় এক লাখ টাকার মুগডাল বিক্রি করতে পারছেন।

জেলা কৃষি অফিস জানায়, এখানে এখন পর্যন্ত ছয় জাতের মুগডাল চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে বারী-৬ জাতটি আকারে বড় এবং অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযোগী হওয়ায় জাপানে এর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। জাপানের একটি কোম্পানির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষকের কাছ থেকে মুগডাল সংগ্রহ করে তা রপ্তানি করা হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে অস্ট্রেলিয়া ও কোরিয়াতেও মুগডাল পাঠানো হয়েছে।

কৃষিবিদ মো. নজরুল ইসলাম জানান, রপ্তানিযোগ্য জাতের মান নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ নিয়মিত পরিদর্শন ও পরামর্শ প্রদান করছে। তিনি বলেন, কৃষকদের উৎসাহ ও পরিশ্রমেই পটুয়াখালী এখন দেশের সবচেয়ে বড় মুগডাল উৎপাদক জেলা।

মাদারবুনিয়া এলাকার কৃষক আতিক হাওলাদার বলেন, দুই একর জমিতে মুগডাল আবাদ করে প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন। দশমিনার কৃষক কাজী কামাল জানান, তার নিজের চাষের যন্ত্র থাকায় এক একরে মাত্র ছয় হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং ৬৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, অন্যান্য রবি ফসলের তুলনায় মুগডাল আবাদ লাভজনক ও ঝুঁকিহীন হওয়ায় দিন দিন তারা এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ইতোমধ্যে মুগডাল বিক্রি শুরু হয়েছে। মাঠে এখনও প্রায় ৪ শতাংশ ফসল রয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভবিষ্যতে রপ্তানির সুযোগ আরও বাড়লে কৃষকরা আরও বেশি উপকৃত হবেন এবং দেশের অর্থনীতিতেও এর বড় প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন