শহরের ছাদে আমের রাজ্য: বাড্ডায় ছাদবাগানে ঝুলছে শত শত আম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৪৭, ৯ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৮:২৮, ৯ জুলাই ২০২৫

এখন আমের মৌসুম। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ট্রাক ও ট্রেনে আম ঢুকছে রাজধানী ঢাকায়। এর মাঝেই ব্যতিক্রমী এক চিত্র দেখা যাচ্ছে ঢাকার বাড্ডায়—একটি ছাদবাগানে ঝুলে আছে শত শত আম। বাজারের যেকোনো উন্নত জাতের আমকে টেক্কা দিতে পারে সেই আমের স্বাদ, গন্ধ ও সৌন্দর্য।
সফিকুল ইসলাম, পেশায় একজন ব্যবসায়ী, কিন্তু নেশা ছাদবাগান। রাজধানীর নূরের চালা এলাকায় তাঁর বাসার ছাদজুড়ে গড়ে তুলেছেন বাহারি ফুল ও ফলের এক বর্ণিল জগৎ। সেই ছাদবাগানেই এখন রাজত্ব করছে হরেক রকম জাতের আমগাছ। মৌসুমি থেকে শুরু করে বারোমাসি—সব ধরনের আমই আছে তাঁর সংগ্রহে।
সারা বছর ফল, সারা বছর আম
সফিকুল ইসলাম বলেন, “যখনই ছাদে আসবেন, কোনো না কোনো গাছে আম দেখতে পাবেন।” তাঁর বাগানে আছে মালয়েশিয়ান লুবনা, থাই কাটিমন, আমেরিকান পালমার, থাই নামডকমাই, ব্যানানা আম, হাঁড়িভাঙা, কিউজাই, পুনাই, চেন্নাইসহ একাধিক দেশি-বিদেশি জাতের আম। সারা বছর এই বাগানে আম আসে ধাপে ধাপে।
গাছের যত্নের বিষয়ে তিনি জানান, প্রতিটি আম ব্যাগিং করে রোদ, বৃষ্টি ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা করা হয়। ফলে ফলন যেমন সুন্দর হয়, তেমনি ফল থাকে বিষমুক্ত ও নিরাপদ। তাঁর ছাদে বারোমাসি লুবনা আমের গাছটি আনা হয়েছে কুমিল্লার কোটবাড়ি থেকে, আর ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহাসিক সূর্যপুরী গাছের কলমও রয়েছে সেখানে।
ফলন শুধু শখ নয়, উৎসবও
প্রতি মৌসুমে ছাদে তিন থেকে চার মণ আম হয়। এ বছর ডাল ছাঁটাইয়ের কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও দুই মণের কম হবে না বলে ধারণা। এখনো গাছে ঝুলছে প্রায় এক মণের মতো পাকা আম। একেকটি আমের ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে শুরু করে ১ কেজি পর্যন্ত।
এই ছাদবাগান শুধু ফলন নয়, পারিবারিক আয়োজন ও বন্ধুত্বপূর্ণ আড্ডার কেন্দ্রও। আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু এলে বাগানের আম কেটে খাওয়ানো হয় উৎসবের আমেজে। কেউ আসতে না পারলে কুরিয়ারে পাঠান ফল। কখনো কখনো কুরিয়ারের খরচ ফলের দামের চেয়েও বেশি হয়, তবু নিজের গাছের ফল প্রিয়জনকে পাঠিয়ে আনন্দ পান তিনি।
ছাদে আমগাছ রাখতে চান? কী করবেন
সফিকুল ইসলামের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ:
-
বারোমাসি জাতের গাছ নিন, যেন সারা বছর ফল আসে।
-
মৌসুমি আমের মধ্যে আম্রপালি, থাই ব্যানানা, হাঁড়িভাঙা ও হিমসাগর রাখুন।
-
গৌড়মতী ও বারি ৪ জাত যুক্ত করলে দেরিতে ফল পাওয়া যায়, ফলে মৌসুমজুড়ে ফলের সরবরাহ থাকে।
-
নির্ভরযোগ্য নার্সারি বা বৃক্ষমেলা থেকে চারা সংগ্রহ করুন।
-
মাটিতে পর্যাপ্ত জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করুন।
আসন্ন জাতীয় বৃক্ষমেলা শুরু হচ্ছে ২৫ জুন, ঢাকার আগারগাঁও বাণিজ্যমেলার পুরোনো মাঠে। চাইলে সেখান থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন উন্নত জাতের আমের চারা।