সাড়া ফেলেছে রাঙামাটির কলা ও কাঁঠালের চিপস

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:১৫, ১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১১:৫৭, ১ জুলাই ২০২৫

সাড়া ফেলেছে রাঙামাটির কলা ও কাঁঠালের চিপস

রাঙামাটিতে কাঁঠাল ও কলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে চিপস। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলকে কাজে লাগিয়ে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন তিন বন্ধু প্রমথ চাকমা, সুবিমল চাকমা ও শান্ত চাকমা। রাঙামাটি শহরের আসামবস্তির কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে ছোট একটি ঘরে তারা স্থাপন করেছেন চিপস তৈরির কারখানা। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই কারখানায় এখন তৈরি হচ্ছে কাঁঠাল, কলা ও আলুর চিপস। আগামী মৌসুমে আম দিয়ে চিপস তৈরি করতেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

কারখানাটি এখন দিনে প্রায় ৩০০ প্যাকেট চিপস উৎপাদন করছে। প্রতিটি ৩০ গ্রাম ওজনের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। উদ্যোক্তারা জানান, আড়াই কেজি খোসাছাড়া কলা থেকে তৈরি করা যায় ৩০ থেকে ৩৫ প্যাকেট চিপস। চিপস ভাজার পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ২০ থেকে ২৫ মিনিটে। উৎপাদনের শুরুতে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ প্যাকেট চিপস তৈরি হলেও এখন চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনও বেড়েছে।

তিন উদ্যোক্তার মধ্যে প্রমথ ও সুবিমল মূলত কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। শান্ত চাকমা বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সুবিমল চাকমা মূলত চিপস তৈরির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালনায় সরাসরি যুক্ত রয়েছেন। কারখানায় বর্তমানে দুইজন শ্রমিক কর্মরত আছেন। ভবিষ্যতে চাহিদা ও উৎপাদন বাড়লে কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বছরে অন্তত আড়াই লাখ মেট্রিক টন কলা এবং এক লাখ মেট্রিক টন কাঁঠাল উৎপাদিত হয়। কিন্তু কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক সময় ফল মাঠেই পচে যায়। উদ্যোক্তারা মনে করেন, চিপস তৈরির এই উদ্যোগ বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করা গেলে স্থানীয় কৃষকরা ন্যায্য দাম পাবেন এবং অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।

চিপস তৈরির জন্য প্রথমে স্থানীয় বাজার থেকে কলা ও কাঁঠাল সংগ্রহ করা হয়। এরপর ফলগুলো খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরায় কেটে মেশিনে ভেজে নেওয়া হয়। এরপর তেল শুকিয়ে তা প্যাকেটজাত করা হয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে এসব চিপস বাজারজাত করা হচ্ছে।

চিপস কারখানা স্থাপনে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুবিমল চাকমা। তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের উদ্যোগ টিকিয়ে রাখতে। এতে করে এলাকার কৃষক, শ্রমিক ও আমরা উদ্যোক্তারাও উপকৃত হব।”

এই উদ্যোগকে সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, “পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদিত ফল স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত হলে কৃষকদের লাভ হবে। উদ্যোক্তারাও কম খরচে কাঁচামাল পাবেন।”

রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, “উৎপাদনের মান বজায় রাখা গেলে রাঙামাটির চিপস দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পাবে।”

আরও পড়ুন