খোলা বাজারে মুরগি জবাই: জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:৪৩, ১ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১৩:২২, ১ জুলাই ২০২৫

খোলা বাজারে মুরগি জবাই: জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি

স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ মাংস প্রাপ্তি মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হলেও, বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানীয় পোল্ট্রি বাজারে এখনো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই হয়ে থাকে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মানুষ প্রতিদিন মাথাপিছু গড়ে ১৪৩.৭৭ গ্রাম মাংস খেয়ে থাকে, যা আমিষের চাহিদা পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। তবে খোলা বাজারে যেভাবে পোল্ট্রি মাংস প্রক্রিয়াজাত করা হয়, তা জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক ময়মনসিংহ সদরের ১২টি বাজারে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখেছেন, সাধারণভাবে জবাইকৃত মাংসে টাইফয়েড (সালমোনেলা) ও ডায়রিয়া (ইকোলাই) রোগের জীবাণু রয়েছে। সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ছিল লগারিদম ৪.০২ থেকে ৫.৫৯ সিএফইউ/গ্রাম এবং ইকোলাই ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা ছিল লগারিদম ৪.০১ থেকে ৫.৯৪ সিএফইউ/গ্রাম পর্যন্ত। এসব জীবাণু সাধারণত মাংসে থাকা উচিত নয় এবং তা মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, এসব বাজারে ৯৬.১৫ শতাংশ দোকান মালিক অসুস্থ মুরগি আলাদা না করে তা বিক্রি করেন। এছাড়া ৮৪.৬২ শতাংশ দোকানে পর্যাপ্ত জায়গা নেই, ৯২ শতাংশ দোকানে ময়লা পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং প্রায় অর্ধেক দোকানে আলো ও স্বাস্থ্যসম্মত জবাইয়ের পরিবেশ অনুপস্থিত। এসব অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি জবাই করা হলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত প্রসেসিং ইউনিট থেকে সংগৃহীত মাংসে কোনো সালমোনেলা বা কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়নি। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জবাইকৃত মাংস নিরাপদ এবং তা রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

এই সমস্যা সমাধানে গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন কয়েকটি সুপারিশ করেছেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে ক্ষুদ্র প্রসেসিং ইউনিট স্থাপন করতে হবে যাতে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পোল্ট্রি জবাই করা সম্ভব হয়। প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে পোল্ট্রি বিক্রেতাদের এই ইউনিট ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংস বিক্রি বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং ক্রেতা-বিক্রেতাকে সচেতন করতে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রচারণা কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে, অন্যদিকে স্থানীয় পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য আরও লাভজনকভাবে বিক্রি করতে সক্ষম হবেন।

আরও পড়ুন