৭ম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন
পোলট্রি শিল্পে বিশুদ্ধ পানির সংকট
প্রকাশ: ১৩:০২, ৩০ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৪৬, ১ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে পোলট্রি খাতের জন্য প্রথমবারের মতো ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর খসড়া সুপারিশের মধ্যেই উঠে এসেছে আরেকটি গুরুতর সংকট—খাতটির টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। ৭ম আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি শামসুল আরেফীন খালেদ।
শনিবার (১০ মে) রাজধানীর বিএআরসি ভবনে অনুষ্ঠিত “জলবায়ু সহনশীল খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্য” শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেইফ ফুড (বিএসএসএফ)।
শামসুল আরেফীন জানান, একটি মুরগির দৈনিক গড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। অথচ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে, অনেক অঞ্চলে নিরাপদ পানি সরবরাহ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির দূষণও বাড়ছে, যা খামারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে রোগবালাই, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পানির সংকট পোলট্রি খাতের উৎপাদনশীলতা, নিরাপদ খাদ্য এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে মুরগির ওজন গড়ে ৫ শতাংশ কমে যায় এবং ডিম উৎপাদনেও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা ও লবণাক্ততার প্রভাব পোলট্রি এবং গবাদিপশু খাতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ঘাস ও চারণভূমির উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যা প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসইতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এ পরিস্থিতিতে শামসুল আরেফীন স্মার্ট ফার্মিং ও আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রেইনওয়াটার হারভেস্টিং, পানি পুনঃব্যবহার এবং ড্রিপ সিস্টেমের মতো প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে জল সংরক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করে বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত ও প্রতিটি খামারকে “রোগ নজরদারি নেটওয়ার্ক”-এর আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।
পোলট্রি খাত বাংলাদেশের প্রোটিন নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের দুধ, ডিম ও মাংস সরবরাহের বড় অংশ আসে এই খাত থেকে। অথচ প্রায় ৮০ শতাংশ খামারি ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের, যাদের প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা সীমিত। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা তারা সামলাতে পারছে না।
সম্মেলনে তিনি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, যাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে পোলট্রি শিল্পকে রক্ষা করা যায়। তিনি বলেন, এখনই প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ, নিরাপদ পানি এবং খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে একটি জলবায়ু সহনশীল পোলট্রি ব্যবস্থা গড়ে তোলার সময়।
শেষে তিনি সতর্ক করে বলেন, “পোলট্রি শিল্প শুধু খাদ্য নয়, এটি আমাদের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি। বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতে অবহেলা করলে শুধু একটি খাত নয়, গোটা জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখনই সময় বিজ্ঞানভিত্তিক ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার।”