পোলট্রি শ্রমিকদের জন্য প্রথমবারের মতো ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর খসড়া
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৫, ৩০ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১২:৪৮, ৩০ জুন ২০২৫

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষিভিত্তিক খাত পোলট্রি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য সরকার প্রথমবারের মতো একটি সংগঠিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর খসড়া সুপারিশ করেছে। গত ১০ এপ্রিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এ খসড়া প্রকাশ করে, যা বর্তমানে দেশজুড়ে শ্রমিক ও খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
বহু বছর ধরেই দেশের ডিম ও মুরগির চাহিদা পূরণ এবং লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে আসছে পোলট্রি খাত। তবে এই শ্রমজীবী মানুষদের জন্য এতদিন পর্যন্ত কোনো নির্ধারিত মজুরি কাঠামো ছিল না। ফলে তাদের আয় ছিল অনিশ্চিত এবং খাতে ছিল ন্যায্য মজুরির অভাব। নতুন এই মজুরি কাঠামো সেই শূন্যতা পূরণে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, পোলট্রি শিল্পে পদভেদে গ্রেডভিত্তিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ গ্রেডভুক্ত হ্যাচারি অপারেটর ও সুপারভাইজারদের জন্য মোট মাসিক মজুরি ধরা হয়েছে ৩০,০৫০ টাকা। এর মধ্যে রয়েছে মূল বেতন ১৮,৭০০ টাকা, বাড়িভাড়া ভাতা ৯,৩৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকা এবং যাতায়াত ভাতা ৫০০ টাকা।
সর্বনিম্ন গ্রেডে থাকা সাধারণ শ্রমিক যেমন ক্লিনার, ফিড সংগ্রাহক ও সহকারী কর্মীদের জন্য নির্ধারিত মাসিক মজুরি ১৬,২৫০ টাকা।
এছাড়া, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণকালীন শ্রমিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ছয় মাস পর পারফরম্যান্স মূল্যায়নের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পদের পূর্ণাঙ্গ মজুরিতে উন্নীত হবে।
প্রস্তাবিত খসড়ায় প্রতি বছর মূল বেতনের ওপর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শ্রমিকরা এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকেই এই বাড়তি সুবিধা পাবেন, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ন্যূনতম মজুরি বোর্ড জানিয়েছে, এই খসড়ার ওপর কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা পক্ষের আপত্তি, সুপারিশ বা মতামত থাকলে তা গেজেট প্রকাশের ১৪ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে বোর্ডে জমা দিতে হবে। সব মতামত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারকে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত এই মজুরি কাঠামো পোলট্রি শিল্পে উৎপাদনশীলতা, কাজের প্রতি উৎসাহ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। একইসঙ্গে, এটি খাতটির টেকসইতা, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।