উষ্ণতা ও খরায় হুমকির মুখে বিশ্বজুড়ে ফসলের উৎপাদন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:২৯, ২৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১১:৪১, ২৮ জুন ২০২৫

বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা এবং শুষ্ক আবহাওয়া ধীরে ধীরে কৃষি উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে—এমনটাই উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। বিশেষ করে গম, যব ও ভুট্টার মতো মৌলিক খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে এই প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে স্বনামধন্য বিজ্ঞান সাময়িকী প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস (PNAS)-এ।
গবেষণার প্রধান গবেষক এবং স্ট্যানফোর্ডের খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশবিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ডেভিড লোবেল জানান, গত ৫০ বছরে পৃথিবীর বড় বড় কৃষি অঞ্চলে তাপমাত্রা ও শুষ্কতার মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই পরিবর্তন সরাসরি ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তন না ঘটলে বর্তমানে বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ শস্যগুলোর উৎপাদন ৪ থেকে ১৩ শতাংশ বেশি হতো বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
লোবেল বলেন, অনেক সময়ই তাকে প্রশ্ন করা হয়, জলবায়ুর প্রভাবে ফসলের ক্ষতি কি প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত ঘটছে? এই কৌতূহল থেকেই তার দল মাঠপর্যায়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, কিছু জলবায়ু মডেল ভবিষ্যদ্বাণী করলেও শুষ্কতার মাত্রা সঠিকভাবে ধরতে পারছে না, বিশেষ করে ইউরোপ ও চীনের মতো তুলনামূলক মৃদু অঞ্চলে।
গবেষণার সহলেখক ও তথ্য বিশ্লেষক স্টেফানিয়া ডি টমাসো বলেন, এই অপ্রত্যাশিত ফলাফলগুলো বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঠিক পূর্বাভাস ও কার্যকর কৃষি কৌশল প্রণয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেয়।
লোবেল আরও বলেন, গম, ভুট্টা বা যবের মতো প্রধান শস্যের ক্ষেত্রে জলবায়ু বিজ্ঞান ভালো কাজ করছে, তবে কফি, কোকো, কমলা বা জলপাইয়ের মতো তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ফসলগুলোর ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। যদিও এসব শস্য খাদ্য নিরাপত্তায় প্রধান নয়, তবু বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ জটিলতার কারণে এদের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
গবেষণাটি কৃষক ও নীতিনির্ধারকদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। উষ্ণ পৃথিবীতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নত জলবায়ু মডেল এবং অভিযোজন কৌশল গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। এ গবেষণার ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি মার্চ মাসের গবেষণার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।