হাতপাখায় ঘুরে বাকপ্রতিবন্দ্বী জামালের ভাগ্যের চাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:০০, ২৮ জুন ২০২৫ | আপডেট: ১৩:০০, ২৮ জুন ২০২৫

পাকা সড়কের ধারে বসে একাগ্রচিত্তে হাতে তৈরি করছেন হাতপাখার ফ্রেম। এক হাতে বাঁশের চাকতি, অন্য হাতে কড সুতা—দাঁত ও পা দিয়েও সাহায্য নিতে হয় তাঁকে। এভাবেই দুই যুগ ধরে নীরবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন বাক্প্রতিবন্ধী জামাল উদ্দিন।
বয়স ৫৬। বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরসভার ভবানীপুর গ্রামের মুন্সিপাড়ায়। বাবা মৃত আবদুল মান্নান। বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় জীবনে বহু বাধা এসেছে। স্ত্রী দুই ছেলেকে নিয়ে অনেক আগেই চলে গেছেন। তবুও হাত পেতে নয়, নিজের তৈরি করা হাতপাখার ফ্রেম বিক্রি করেই বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জামাল।
চাকতি বাঁশের, সুতা শক্ত করে বাঁধা, আর কিছু ফ্রেমের হাতল স্টেইনলেস স্টিলের—তার প্রতিটি হাতপাখার ফ্রেম বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। গ্রামে ঘুরে ঘুরে এসব ফ্রেম বিক্রি করেন তিনি। স্থানীয় গৃহবধূরা রঙিন কাপড়ে মুড়িয়ে তাতে নকশা করেন।
ভবানীপুরের গৃহবধূ জেবুন্নাহার বেগম বলেন, “জামাল চাচার বানানো পাখার ফ্রেম অনেক মজবুত। আমি তাঁর কাছ থেকে দুটি কিনেছি—একটি নিজের জন্য, একটি ছেলের জন্য।”
তাঁর নিজের কোনো বসতভিটে নেই। নদীপাড়ের ৩ শতাংশ জমি বাড়ি করার উপযোগী নয়। থাকেন বড় ভাই মোজাম্মেল হকের আশ্রয়ে। মোজাম্মেল হক বলেন, “স্ত্রী চলে গেছে, কিন্তু ভাই হিসেবে আমি জামালকে ফেলে দিতে পারি না। সে পরিশ্রম করে খায়। চেষ্টা করছি তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করতে।”
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল বলেন, “জামাল উদ্দিন বাকপ্রতিবন্ধী হয়েও পরিশ্রম করে উপার্জন করছেন। তাঁর অনলাইন আবেদন করা হয়েছে, যাচাই শেষে প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন। ভবিষ্যতে অন্য সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের মতে, সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে জামালের ছোট্ট হাতপাখার ফ্রেমের ব্যবসাও হতে পারে বড়, বদলে যেতে পারে তাঁর জীবনের চিত্র।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো